হাওর বার্তা ডেস্কঃ ইউটিউব, টিকটক, লাইকি, ফেসবুক গ্রুপ, ফেসবুক পেজসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কঠোর নিয়ন্ত্রণে নিচ্ছে সরকার। এ ব্যাপারে ইতিমধ্যে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মাঠ পর্যায়ে পুলিশ সদর দপ্তরের ১০ নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম মনিটরিং করতে প্রতিটি জেলা ও মেট্রোপলিটন ইউনিটে সাইবার পেট্রোলিং টিম গঠন করতে হবে। জেলায় একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও তথ্য প্রযুক্তিতে দক্ষ বিভিন্ন পদের প্রয়োজনীয় সংখ্যক কর্মকর্তা ও পুলিশ সদস্যদের সমন্বয়ে এই টিম করা হবে। মেট্রোপলিটন এলাকার ক্ষেত্রে একজন উপ-পুলিশ কমিশনারের নেতৃত্বে অনুরূপ টিম গঠন করতে হবে। বিশ্বে টিকটকের সর্বোচ্চ ব্যবহারকারীদের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান তৃতীয়। দেশে প্রায় ৫ কোটি মানুষ টিকটক ব্যবহার করে। দেশে পর্যাপ্ত খেলার মাঠ নেই। দেড় বছর ধরে স্কুল বন্ধ। এ কারণে মোবাইলে আসক্ত হয়ে পড়ছে উঠতি তরুণরা।
বিভিন্ন জরিপে জানা গেছে, উঠতি তরুণ-তরুণী, কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে ৮৫ ভাগ মোবাইল ফোনকে অনিষ্টকর কাজে ব্যবহার করে। বিভিন্ন এলাকায় টিকটিক গ্রুপ, কিশোর গ্যাং কালচার শুরু হয়েছে। ছেলে-মেয়েরা লেখাপড়া বাদ দিয়ে মাদকাসক্তসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। টিকটকের মাধ্যমে নারী ও অর্থ পাচার হচ্ছে। অশ্লীল ভিডিও তৈরিতে জড়িত লাইকি ও টিকটক ব্যবহারকারীদের তালিকা করছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী।
এরই মধ্যে কমপক্ষে ৪০টি গ্রুপের সন্ধান মিলেছে, যারা অশ্লীল ভিডিও তৈরি করে। এরই মধ্যে যাদের সম্পর্কে তথ্য পাওয়া গেছে, তাদের বিরুদ্ধে শিগগির সাঁড়াশি অভিযান শুরুর কথাও বলছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পুলিশ সদর দপ্তর থেকে মাঠ পর্যায়ে যে ১০ নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, জেলা ও মেট্রোপলিটন ইউনিটের অপরাধ সভায় সাইবার টহল দল-এর প্রধান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম মনিটরিংয়ে প্রাপ্ত বিষয়াদি উপস্থাপন করবেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সঠিক ব্যবহার সম্পর্কে বিট পুলিশ ও কমিউনিটি পুলিশের সভা, ওপেন হাইজডে, চৌকিদারী প্যারেড, সচেতনতামূলক সমাবেশ প্রভৃতিতে সাধারণ জনগণকে সচেতন করতে হবে। এছাড়া শিক্ষার্থীদের নিয়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রম আয়োজন করতে হবে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে শিশু-কিশোররা গ্যাং গঠন করে অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়ার তথ্য পাওয়া গেলে গ্যাং সদস্যদের ধারাবাহিকভাবে নজরদারীর আওতায় আনতে হবে। প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার জন্য সংশ্লিষ্টদের নিয়ে কাউন্সেলিং করতে হবে এবং অপরাধ সংশিষ্টতা পাওয়া গেলে যথাযথ প্রক্রিয়ায় আইনের আওতায় আনতে হবে।
বিশিষ্ট মনোরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মোহিত কামাল বলেন, উঠতি বয়সের ছেলে-মেয়েদের উত্সাহ-আনন্দ, চাহিদা ও আকাঙ্ক্ষা থাকে। টিকটকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে সেখানে তারা ঝুঁকে পড়ছে। এতে তরুণ সমাজ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ভাল ও খারাপ দিক দুটোই আছে। খারাপ দিকে বেশি ঝুঁকছে তারা।
অপরাধ বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান বলেন, অ্যাপসগুলো বাণিজ্যিক ভিত্তিক। তারা কোটি কোটি টাকা আয় করছে। এটা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। তবে ফিল্টারিংয়ের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এক্ষেত্রে ইউনিউটসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশি আসক্ত হচ্ছে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তরা। দেশে খেলাধূলার মাঠ নেই, পারিবারিক বন্ধন হ্রাস পাচ্ছে। করোনাকে কেন্দ্র করে দেড় বছর শিক্ষার্থীরা গৃহবন্দি। এ কারণে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসক্তি ভয়াবহ অবস্থায় দাঁড়িয়েছে। এদের ফিরিয়ে আনা কঠিন। বিট পুলিশিং, কমিউনিটি পুলিশসহ তৃণমূলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী আছে। তারপরও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসক্তি ও অপরাধে জড়িয়ে পড়ার প্রবণতা বেশি হওয়ার আগে তা রোধ করা গেল না কেন। আমাদের আধুনিক যুগে এসে পারিবারিক বন্ধন হ্রাস পেয়েছে। পুরো সমাজকে কাজে লাগিয়ে প্রতিকারই সর্বোত্তম ব্যবস্থা বলে তিনি জানান।